মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ১২:১৭ অপরাহ্ন

শেয়ার ব্যবসায় নিঃস্ব, প্রশ্নফাঁসে কোটিপতি

শেয়ার ব্যবসায় নিঃস্ব, প্রশ্নফাঁসে কোটিপতি

স্বদেশ ডেস্ক:

শেয়ারবাজারে ধসের ঘটনায় এক রকম নিঃস্ব হয়ে যান মিজানুর রহমান মিজান। আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার মতো হঠাৎ তার সঙ্গে রাশেদ আহমেদ বাবুল ও মুবিনের পরিচয় হয়। লাভ আর লোভে তাদের কাছ থেকে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কিনে কয়েকগুণ দামে বিক্রি করতেন মিজান। বছর না ঘুরতেই বিপুল অর্থের মালিক হয়ে যান তিনি।

সম্প্রতি ফাঁস হওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত ৫ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ৩৫ লাখ টাকায় কিনে কয়েকগুণ দামে তা চক্রের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম জাহিদের কাছে বিক্রিও করেছিলেন মিজান। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি প্রকাশ হওয়ায় আত্মগোপনে চলে যান চক্রের সদস্যরা। গত রবিবার মিজানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাবুল ও মুবিনও বর্তমানে গোয়েন্দা পুলিশের জালে রয়েছেন।

পুলিশ জানায়, এলাকায় শেয়ার ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন মিজান। তিনি সবাইকে বলতেন, শেয়ার ব্যবসা করেই বিপুল টাকা আয় হচ্ছে তার।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহাদাত হোসেন সুমা আমাদের সময়কে বলেন, ‘মিজানকে গ্রেপ্তারের পর কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। বাবুল ও মুবিনের নামও রয়েছে। আমরা তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি। গত রবিবার পর্যন্ত মিজানসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।’

গত ৬ থেকে ১০ নভেম্বর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রথমে প্রশ্নফাঁস চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিম। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মোক্তারুজ্জামান রয়েল, শামসুল হক শ্যামল, জানে আলম মিলন, মোস্তাফিজুর রহমান মিলন ও রাইসুল ইসলাম স্বপন। পরের দিন গ্রেপ্তার করা হয় সোহেল রানা, এমদাদুল হক খোকন ও এবিএম জাহিদকে। গ্রেপ্তার করা হয় ব্যাংক নিয়োগের প্রশ্নপত্র তৈরির দায়িত্ব পাওয়া আহছান উল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন কর্মচারী দেলোয়ার, পারভেজ ও রবিউলকে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তার ১৪ জনের মধ্যে ৫ জন রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকে কমর্রত ছিলেন। চাকরির পাশাপাশি তারা নিয়মিত সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে বিপুল টাকার মালিক হয়েছেন।

পুলিশ জানায়, আহ্ছান উল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সহকারী দেলোয়ার গ্রেপ্তার হওয়ার পর ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে তার ভগ্নিপতি মুবিনকে প্রশ্নপত্র দিতেন বলে জানিয়েছিলেন। মুবিন সেই প্রশ্ন নিয়ে বিক্রি করতেন মিজানের কাছে। মূলত আহছানিয়া মিশন এবং আহ্ছান উল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের কর্মচারীরা প্রতিটি প্রশ্ন ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। আর সেই প্রশ্ন হাত বদলে দাম উঠত ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত। জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা সোহেল রানা ১৭৫ জনের কাছে ১০ লাখ টাকা করে প্রতিটি প্রশ্ন বিক্রি করে প্রায় ২০ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, মিজানের গ্রামের বাড়ি রংপুরের কোতোয়ালি থানার আলমনগর মহাদেবপুর এলাকায়। বাবার নাম আব্দুল কাদের। আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মিজান জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে আসছিলেন তিনি। সর্বশেষ সমন্বিত ৫ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন রাশেদ আহমেদ বাবুল ও মুবিনের কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকায় তিনি কিনে নেন। পরে তিনি সেই প্রশ্ন জাহাঙ্গীর আলম জাহিদের কাছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় বিক্রির জন্য চুক্তি করেন।

আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তি ও গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মিজান জানিয়েছেন, জাহিদ তার কাছ থেকে প্রশ্ন কিনে জনতা ব্যাংক কর্মকর্তা সোহেল রানার কাছে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকায় বিক্রির জন্য চুক্তি করেছিলেন।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের পর যতবার হাত বদল হয়, তত দাম বাড়তে থাকে। শেষ ধাপে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে প্রতিটি প্রশ্নপত্র ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে বিক্রি করা হয়।

পুলিশ বলছে, সমন্বিত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসচক্রে বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরের পাশাপাশি উপসচিব পদমর্যাদার একাধিক কর্মকর্তার সম্পৃক্ততাও পাওয়া গেছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করছেন। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877